যোজক কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি ?

যোজক হলো এমন শব্দ বা অব্যয়, যা দুটি পদ, বর্গ বা বাক্যকে যুক্ত করে এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে। যোজকের মাধ্যমে বাক্যের বিভিন্ন অংশকে যুক্ত করে অর্থবোধক ও সুসংগঠিত করা হয়।
যোজকের উদাহরণ:
- সাধারণ যোজক: রহিম ও করিম বন্ধু।
- বিকল্প যোজক: তুমি চা অথবা কফি নাও।
- বিরোধ যোজক: সে খুব চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি।
- কারণ যোজক: বৃষ্টি হচ্ছে, তাই আমি যাবো না।
- সাপেক্ষ যোজক: যদি তুমি পড়ো, তবে ভালো ফল পাবে।
যোজকের সাহায্যে বাক্যকে সুসংগঠিত করে অর্থ আরও পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করা যায়।
আরো পড়ুন : সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যোজককে নিম্নলিখিত শ্রেণিতে ভাগ করা যায়:
১. সাধারণ যোজক :
যে যোজক দুটি শব্দ বা বাক্যকে সরাসরি যুক্ত করে, তাকে সাধারণ যোজক বলে। এটি সমমানের দুটি পদ বা বাক্যাংশকে সংযোগ করে এবং কোনো শর্ত বা বিরোধ সৃষ্টি করে না।
উদাহরণ:
- রহিম ও করিম এই কাজটি করেছে।
- জলদি দোকানে যাও এবং পাউরুটি কিনে আনো।
- সে খুব মেধাবী আর পরিশ্রমী।
সাধারণ যোজকের কিছু উদাহরণ:
- ও
- এবং
- আর
- কিংবা
এগুলো সাধারণ বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে দুটি অংশকে সহজভাবে যুক্ত করে।
২. বিকল্প যোজক :
বিকল্প যোজক হলো সেই ধরনের যোজক, যা একাধিক শব্দ বা বাক্যের মধ্যে বিকল্প বা সম্ভাবনা নির্দেশ করে। অর্থাৎ, যখন কোনো একটি বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে, তখন বিকল্প যোজক ব্যবহৃত হয়।
বিকল্প যোজকের কিছু উদাহরণ:
- বা → তুমি চা বা কফি খেতে পারো।
- অথবা → লাল অথবা নীল জামাটি নাও।
- নাহয় → তুমি এসে যাও, নাহয় আমি যাবো।
- কিংবা → সংখ্যা সাত কিংবা আট হতে পারে।
এই যোজকগুলো বাক্যে দুটি বা ততোধিক সম্ভাব্য বিষয়ের মধ্যে বিকল্প সম্পর্ক স্থাপন করে।
৩. বিরোধ যোজক :
যে যোজক দুটি বাক্যের মধ্যে বিরোধ বা বিপরীত সম্পর্ক সৃষ্টি করে, তাকে বিরোধ যোজক বলে। এই ধরনের যোজক বাক্যের প্রথম অংশের বক্তব্যের বিপরীতে দ্বিতীয় অংশের বক্তব্য উপস্থাপন করে।
উদাহরণ:
- এত পড়লাম, কিন্তু পরীক্ষায় ভালো করতে পারলাম না।
- তাকে আসতে বললাম, তবু সে এল না।
- লোকটি ধনী, তবে দানশীল নন।
সাধারণ বিরোধ যোজকের তালিকা:
- কিন্তু
- তবু
- তবে
- অথচ
- কিন্তুু
- যদিও
- তথাপি
এই যোজকগুলো ব্যবহার করে দুটি বিপরীত অর্থবোধক বাক্য বা অংশকে যুক্ত করা হয়।
৪. কারণ যোজক :
কারণ যোজক হলো এমন যোজক যা দুটি বাক্যের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রকাশ করে। অর্থাৎ, এক অংশের বক্তব্যের কারণ অন্য অংশে প্রকাশ পায়। কারণ যোজক সাধারণত “কারণ”, “যেহেতু”, “তাই”, “ফলে”, “কেননা” ইত্যাদি শব্দ দ্বারা গঠিত হয়।
উদাহরণ:
- জিনিসের দাম বেড়েছে, কারণ চাহিদা বেশি।
- সময় নেই, তাই দেরি করা যাবে না।
- পড়াশোনা করিনি, ফলে পরীক্ষায় ভালো করতে পারিনি।
- সে কষ্ট পাচ্ছে, যেহেতু তার কাছের মানুষ চলে গেছে।
- আমি বাইরে যাইনি, কেননা বৃষ্টি হচ্ছিল।
এই সব উদাহরণে দেখা যায়, প্রথম অংশের বক্তব্যের পেছনের কারণ দ্বিতীয় অংশে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এজন্য এগুলো কারণ যোজকের উদাহরণ।
৫. সাপেক্ষ যোজক:
সাপেক্ষ যোজক এমন একটি যোজক যা দুটি বাক্যের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বা সম্পর্ক নির্দেশ করে। সাধারণত, একটি অংশ শর্ত প্রকাশ করে এবং অন্যটি তার পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
উদাহরণ:
✅ যদি তুমি পড়াশোনা করো, তবে ভালো ফল পাবে।
✅ যতই কঠিন হোক, ততই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
✅ যখন বৃষ্টি থামবে, তখন আমরা বের হবো।
এখানে দেখা যাচ্ছে, বাক্যের এক অংশ অন্য অংশের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ, একটির অর্থপূর্ণতা অন্যটির সাথে সম্পর্কিত। এই ধরনের যোজককে সাপেক্ষ যোজক বলে।
যোজক সম্পর্কিত এমসিকিউ প্রশ্ন ও উত্তর
১. যোজক কাকে যুক্ত করে?
ক) পদ
খ) বর্গ
গ) বাক্য
ঘ) সবগুলো (√)
২. নিচের কোনটি সাধারণ যোজকের উদাহরণ?
ক) তুমি ভালোবাস বা ঘৃণা করো, আমি সত্য বলবো।
খ) তিনি ভালো লেখেন এবং সুন্দরভাবে বলেন। (√)
গ) সে আসতে বললাম, তবু এল না।
ঘ) এত পড়লাম, কিন্তু পরীক্ষায় ভালো করতে পারলাম না।
৩. নিচের কোন বাক্যে বিকল্প যোজক ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) তুমি এসো অথবা রবি আসুক। (√)
খ) যত পড়ি, ততই জানি।
গ) সময় বেশি নেই, কারণ রোদ ডুবে যাচ্ছে।
ঘ) আমি খুব ক্লান্ত, তবে তোমার কথা শুনতে ভালো লাগছে।
৪. “তবু” কোন ধরনের যোজক?
ক) বিকল্প যোজক
খ) কারণ যোজক
গ) বিরোধ যোজক (√)
ঘ) সাধারণ যোজক
৫. “যদি রোদ ওঠে তবে রওনা দেবো” – বাক্যটি কোন যোজক নির্দেশ করে?
ক) সাধারণ যোজক
খ) বিকল্প যোজক
গ) বিরোধ যোজক
ঘ) সাপেক্ষ যোজক (√)
৬. কোন যোজক দুটি বাক্যের মধ্যে কারণ সম্পর্ক প্রকাশ করে?
ক) সাধারণ যোজক
খ) বিকল্প যোজক
গ) কারণ যোজক (√)
ঘ) বিরোধ যোজক
৭. নিচের কোন বাক্যে বিরোধ যোজক ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) তুমি এসো অথবা আমি যাবো।
খ) আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। (√)
গ) যত পারো, তত সংগ্রহ করো।
ঘ) পড়তে বসো এবং মনোযোগ দাও।
৮. “যত পড়ি, ততই জানি” – এই বাক্যে কোন ধরনের যোজক ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) কারণ যোজক
খ) বিকল্প যোজক
গ) সাপেক্ষ যোজক (√)
ঘ) বিরোধ যোজক
৯. “সুতরাং” কোন ধরনের যোজক?
ক) কারণ যোজক (√)
খ) বিকল্প যোজক
গ) বিরোধ যোজক
ঘ) সাধারণ যোজক
১০. “তাই” শব্দটি কোন ধরনের যোজক?
ক) কারণ যোজক (√)
খ) বিকল্প যোজক
গ) বিরোধ যোজক
ঘ) সাধারণ যোজক
১১. নিচের কোন বাক্যে কারণ যোজক ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) তুমি এসো অথবা আমি যাবো।
খ) আমি ক্লান্ত, তাই বিশ্রাম নিচ্ছি। (√)
গ) সে এল, কিন্তু কথা বললো না।
ঘ) যদি সে আসে, তবে আমরা বের হবো।
১২. “ও” শব্দটি কোন ধরনের যোজক?
ক) কারণ যোজক
খ) বিকল্প যোজক
গ) বিরোধ যোজক
ঘ) সাধারণ যোজক (√)
১৩. নিচের কোন বাক্যে বিকল্প যোজক ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) তুমি পড় অথবা খেলো। (√)
খ) সে আসবে, কারণ তাকে ডাকা হয়েছে।
গ) তুমি ভালো, তবে তোমার বন্ধু ভালো নয়।
ঘ) যত বেশি পড়বে, তত বেশি শিখবে।
১৪. “তবে” শব্দটি কোন ধরনের যোজক?
ক) সাধারণ যোজক
খ) কারণ যোজক
গ) বিরোধ যোজক (√)
ঘ) বিকল্প যোজক
১৫. “আর” শব্দটি কোন ধরনের যোজক?
ক) বিকল্প যোজক
খ) কারণ যোজক
গ) সাধারণ যোজক (√)
ঘ) বিরোধ যোজক
১৬. নিচের কোন বাক্যে সাপেক্ষ যোজক ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) এত পড়লাম, কিন্তু পরীক্ষায় ভালো করলাম না।
খ) যদি তুমি যাও, তবে আমিও যাবো। (√)
গ) সময় নেই, তাই দেরি করো না।
ঘ) আমি বলেছি, কারণ আমি জানি।
১৭. “কিংবা” কোন ধরনের যোজক?
ক) কারণ যোজক
খ) বিকল্প যোজক (√)
গ) বিরোধ যোজক
ঘ) সাধারণ যোজক
১৮. “ফলে” কোন ধরনের যোজক?
ক) কারণ যোজক (√)
খ) বিকল্প যোজক
গ) বিরোধ যোজক
ঘ) সাধারণ যোজক
১৯. “যখন-তখন” কোন ধরনের যোজক?
ক) কারণ যোজক
খ) সাপেক্ষ যোজক (√)
গ) বিরোধ যোজক
ঘ) বিকল্প যোজক
২০. “কেননা” কোন ধরনের যোজক?
ক) কারণ যোজক (√)
খ) বিকল্প যোজক
গ) বিরোধ যোজক
ঘ) সাধারণ যোজক